মনির খান নড়াইল। নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার মোর্শেদা সার্জিক্যাল ক্লিনিকে একজন গর্ভবতী মহিলার জীবন বিপন্ন হওয়ার ঘটনা নিয়ে তীব্র সমালোচনার ঝড়। গর্ভবতী মহিলা সোনিয়া আক্তার, যিনি মঙ্গলহাটা গ্রামের শ্বশুরবাড়ি থেকে মোর্শেদা ক্লিনিকে এসে গত ২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখ ভর্তি হন, এবং চিকিৎসার সময় মারাত্মক অবহেলার শিকার হন ওই মহিলা। প্রসবকালীন জটিলতার কারণে তার রক্তের প্রয়োজন হলে, ভুল রক্ত প্রদান করার পর তার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে।
সোনিয়া আক্তার গর্ভবতী অবস্থায় মোর্শেদা ক্লিনিকে ভর্তি হলে তার রক্তের প্রয়োজন হয়। রোগীর রক্তের গ্রুপ এ পজেটিভ হলেও, ভুল করে ভিন্ন গ্রুপের এবি পজেটিভ রক্ত তার শরীরে প্রয়োগ করা হয়। এ ধরনের চিকিৎসাগত অবহেলা তার শারীরিক অবস্থাকে মরণাপন্ন পর্যায়ে নিয়ে যায়। যখন এই পরিস্থিতি তৈরি হয়, তখন তাকে দ্রুত ডক্টরস ক্লিনিকে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেও পরিস্থিতি সামাল দিতে না পারলে তাকে অন্যত্র রেফার্ড করা হয়।
বর্তমানে রোগী সংকটাপন্ন অবস্থায় রয়েছেন। ভুক্তভোগী সোনিয়ার পরিবার দায়ী করেছেন মোর্শেদা ক্লিনিকের চিকিৎসকদের অবহেলাতেই মূলতঃ রক্তের গ্রুপ যাচাই না করে ভিন্ন গ্রুপের রক্ত দেওয়া অত্যন্ত দায়িত্বহীন কাজ করেছেন, যা রোগীর জীবন বিপন্ন করেছে। চিকিৎসকরা রোগীর সঠিক রক্ত গ্রুপ না মেলানো বা ভুল রক্ত প্রদান করা একটি মারাত্মক চিকিৎসাগত ভুল, যা রোগীর শরীরের বিপর্যস্ত অবস্থার জন্য দায়ী। এই বিষয়ে নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আরএমও ডাক্তার আবদুল্লাহ আল মামুনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “এটি একটি মারাত্মক ভুল হয়েছে এবং এমন ধরনের অবহেলা অত্যন্ত দুঃখজনক।
চিকিৎসকদের উচিত ছিল রোগীর রক্তের গ্রুপ নিশ্চিত করে রক্ত প্রদান করা। এমন ঘটনা কখনোই কাম্য নয়, এবং এ বিষয়ে তদন্ত প্রয়োজন।” ডাক্তার আবদুল্লাহ আল মামুন আরো বলেন, “যারা এমন ভুল করেছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। এ ধরনের ভুলে শুধু একজন মানুষের জীবনই বিপন্ন হয় না, বরং পুরো চিকিৎসা ব্যবস্থার ওপর মানুষের আস্থা হারায়।
” সোনিয়া আক্তারের পরিবারের দাবি, এই ঘটনা একটি সুস্পষ্ট চিকিৎসাগত অপরাধ এবং এর জন্য দায়ীদের বিচার হওয়া উচিত। তারা স্থানীয় প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগকে দ্রুত তদন্ত করে সঠিক পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারাও এই ঘটনার তীব্র সমালোচনা করেছেন এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের ভুল এড়ানোর জন্য স্বাস্থ্য সেবা খাতে পর্যাপ্ত মনিটরিং ও সতর্কতা নিশ্চিত করার দাবি তুলেছেন। চিকিৎসা সেবা একটি মানবিক পেশা হলেও এমন অবহেলা ও ভুলের ঘটনা মানুষের জীবন বিপন্ন করে। সোনিয়া আক্তারের ঘটনাটি নড়াইলসহ সারা দেশে স্বাস্থ্য সেবা খাতে দায়িত্বশীলতা ও সতর্কতার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরছেন। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যদি দ্রুত তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ না করে, তবে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা আবারও ঘটার আশঙ্কা থেকেই যায়।