সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ বৃহস্পতিবার  (২৩ জুন) সুনামগঞ্জের বন্যাকবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। পরিদর্শনকালে জেলার সুরমা ইউনিয়নের মঈনপুর এলাকায় বন্যার্তদের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করেন তিনি। বলেন, সবাই মিলে কাজ করলে যেকোনও দুর্যোগ মোকাবিলা সম্ভব।

এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ বলেন, বন্যাদুর্গতদের পুনর্বাসনের জন্য কাজ করে যাচ্ছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। বন্যা চলে যাওয়ার পরেও যতদিন জনগণের প্রয়োজন হবে, ততদিন তাদের পাশে থেকে সেনাসদস্যরা সব সহযোগিতা করবে। বন্যা-পরবর্তী বিপর্যস্ত জনজীবনের দুর্ভোগ দূরীকরণের নিমিত্তে সরকারের সব সংস্থা নিরলসভাবে কাজ করছে। সেনাবাহিনীও তাদের প্রয়োজনীয় সব কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। 

চলমান উদ্ধার অভিযান ও ত্রাণ বিতরণের পাশাপাশি প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা কার্যক্রমে অধিকতর তৎপর হওয়ার জন্য সেনাসদস্যদের নির্দেশনা দেন তিনি। সেনাপ্রধান বলেন, ইতোমধ্যে সেনাবাহিনীর ব্যবস্থাপনায় বন্যার্তদের প্রয়োজনীয় ওষুধ সরবরাহ করা হচ্ছে। ভবিষ্যতেও এ কার্যক্রম বিশেষ গুরুত্বসহকারে পরিচালিত হবে। 

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১৭ এবং ১৯ পদাতিক ডিভিশনের সেনাসদস্যরা সিলেট, সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোনার মোট ২০টি উপজেলায় বন্যাদুর্গতদের সহায়তায় মোতায়েন রয়েছেন। তারা নিরলসভাবে পানিবন্দি মানুষকে উদ্ধার ও দুর্গতদের মাঝে খাবার বিতরণ, বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ এবং চিকিৎসা সহায়তা দিচ্ছেন। 

সেনাবাহিনী এখন পর্যন্ত সিলেট, সুনামগঞ্জ এবং নেত্রকোনার বন্যাকবলিত এলাকায় ১২ হাজার ১৪৮ জন বন্যাদুর্গত ব্যক্তিকে উদ্ধার করে বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে পাঠিয়েছে। ১৪ হাজার ৭৫০ জনকে চিকিৎসা সহায়তা দিয়েছে। ২১ হাজার ৯৬৮ জনের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করেছে। ৫৫ হাজার ১৩৬টি পরিবারের মাঝে খাবার বিতরণ করেছে। পাশাপাশি বন্যার্তদের মাঝে ৫৪ হাজার ৮২৮ লিটার বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ এবং পানি বিশুদ্ধকরণ ওষুধ বিতরণ করেছে। প্রতিদিনই এই সংখ্যা বাড়ছে। 

বন্যাকবলিত এলাকায় যোগাযোগ ব্যবস্থা সচল রাখার নিমিত্তে সিলেটের তেলিখালের ওপর কাটাগঙ্গা সেতু মেরামত করা হয়েছে। সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। পানি নিষ্কাশন ও ভূমিধস রোধে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। 

এছাড়া সেনাসদস্যরা জেলার বড়ইকান্দি ও কুমারগাঁও বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রগুলোকে প্লাবন থেকে রক্ষা এবং নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ প্রবাহ নিশ্চিতকরণে কাজ করে যাচ্ছে। 

সুনামগঞ্জ জেল কর্তৃপক্ষের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে জেল সদস্যদের ও কয়েদিদের জন্য শুকনা খাবার এবং বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা হয়েছে। পাশাপাশি ইউনিসেফের অনুরোধে সুনামগঞ্জের প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিশুদের জন্য রক্ষিত মূল্যবান ভ্যাকসিন নিরাপদ স্থানে স্থানান্তর করা হয়েছে। 

বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত এবং যতদিন প্রয়োজন, ততদিন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এই মানবিক কার্যক্রম অব্যাহত রাখবে। 

এসময়ে সেনাবাহিনীর প্রধানের সফরসঙ্গী হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ডাইরেক্টর জেনারেল অব মেডিক্যাল সার্ভিস মেজর জেনারেল মো. মাহবুবুর রহমান। এছাড়া সর্বস্তরের জনসাধারণকে উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবেলায় এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।  পরিদর্শনকালে আরও উপস্থিত ছিলেন মেজর জেনারেল মো. আবু সাঈদ সিদ্দিক, মেজর জেনারেল মুহাম্মদ যুবায়ের সালেহীন, মেজর জেনারেল হামিদুল হক এবং সেনাসদরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।