লালমনিরহাট নর্থবেঙ্গল বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় যেন হরিলুটের হাতিয়ার
লালমনিরহাট নর্থবেঙ্গল বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় পরিচালনায় চরম স্বেচ্ছাচারিতা ও নজীর বিহীন জালিয়াতি অভিযোগ উঠেছে।এ যেন হরিলুটের হাতিয়ার।বিদ্যালয়টিতে নেই নিয়োগপ্রাপ্ত কোন প্রধান শিক্ষক, নেই ব্যবস্থাপনা কমিটি, নেই পর্যাপ্ত শিক্ষার্থী, প্রতিবন্ধী বিষয়ক দপ্তরেরও নেই যথাযথ তদারকি। নিয়োগ বাণিজ্যে নিমজ্জিত অবৈতনিক প্রধান শিক্ষকের নেই কোন দায়বদ্ধতা। এ যেন এক মগের মুল্লুক।
বিদ্যালয়টির সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহকালীন বিভিন্ন সুত্রে জানা যায়, ২০০৯ সালের ১২ অক্টোবর অরুন কুমার রায়ের সভাপতিত্বে আয়োজিত এক সভায় নর্থবেঙ্গল ডিজাবল ডেভেলপমেন্ট সেন্টার সংস্থা কর্তৃক পরিচালিত প্রতিবন্ধীদের শিক্ষাকার্যক্রম ‘‘নর্থবেঙ্গল বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়’’ নামকরণে পরিচালনার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। একই সভায় নর্থবেঙ্গল ডিজাবল ডেভেলপমেন্ট সেন্টারের নির্বাহী পরিচালক সুভাষ চন্দ্র বর্মন তার সংস্থার দায়িত্বের পাশাপাশি বিদ্যালয়ের অবৈতনিক প্রধান শিক্ষক/পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন বলে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় এবং লালমনিরহাট জেলা শহরের গোশালা সোসাইটি চত্ত¡রে একটি টিনের ঘর ভাড়া নিয়ে ২০১০ সালের জানুয়ারি মাস থেকে এ বিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরুর সিদ্ধান্ত হয়। বিদ্যালয়টি পরিচালনার জন্য শিক্ষক নিয়োগের সিদ্ধান্ত হয় ২০০৯ সালের ২৫ অক্টোবর। লালমনিরহাট চার্চ অব গড উচ্চ বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মোঃ আবুল কালাম আজাদকে নিয়োগ কমিটির সভাপতি করে ২০০৯ সালের ২৪ ডিসেম্বর ২৭ জন শিক্ষক-কর্মচারীকে নিয়োগ প্রদান করা হয় এবং তা ৩১ ডিসেম্বর তারিখের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় অনুমোদিত হয়। শিক্ষক-কর্মচারীরা যথারীতি চাকুরীতে যোগদান করে বিনা বেতনে শিক্ষকতা শুরু করেন। বিদ্যালয়টি ২০১৩ সালের ২৮ মার্চ অনুমোদন পেলে তা বিদ্যালয়ের অবৈতনিক প্রধান শিক্ষক/পরিচালকের জন্য হয়ে উঠে শাপেবর। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষক জানান, বিদ্যালয়ের জমিক্রয়, অবকাঠামো নির্মাণ ও বিদ্যালয় এমপিওভুক্ত করণ খরচের নামে শুরু হয় অর্থ লোপাট। ২০১৭ সালের ২৪ মে তারিখে অর্থ মন্ত্রণালয় বিদ্যালয়টির ১৭ জন শিক্ষক-কর্মচারীর অর্থ ছাড় দিলে বিষয়টি আরো জোড়দার হয়ে উঠে। কারণ নিয়োগপ্রাপ্ত ২৭ জন শিক্ষক-কর্মচারীর মধ্যে বেতন-ভাতা পাবেন ১৭ জন। ২০২০ সালের ৬ আগস্ট বিদ্যালয়টির এমপিও ঘোষণা হলে শুরু হয় অর্থ লোপাটের মহোৎসব। জ্যেষ্ঠতা/সিনিয়রিটি লঙ্ঘন করে ২০২০ সালের ২২ আগস্ট বেতন ভাতার সরকারি অংশ প্রাপ্তির জন্য সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে ১৭ জন শিক্ষক-কর্মচারীর নামের তালিকা প্রেরিত হয়। শিক্ষক-কর্মচারীদের কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে ২০২১ সালের ২৭ মে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় ১জন সহকারী শিক্ষকের বি.এস.এড স্কেল সহ মোট ১২ জন শিক্ষক-কর্মচারীর এমপিও আদেশ জারি করে। বি.এস.এড ডিগ্রী না থাকায় অন্যান্য শিক্ষকরা একধাপ নিচের বেতন স্কেল প্রাপ্ত হন। নিয়োগ বাণিজ্যের সুবিধার্থে দীর্ঘ ১৩ বছরেও নর্থবেঙ্গল ডিজাবল ডেভেলপমেন্ট সেন্টারের নির্বাহী পরিচালক সুভাষ চন্দ্র বর্মন উক্ত বিদ্যালয়ে কোন প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দেননি।
২০২০ সালের ২২ আগস্ট বেতন ভাতার সরকারি অংশ প্রাপ্তির জন্য সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে শিক্ষক-কর্মচারীদের নামের তালিকা প্রেরণ সংক্রান্ত রেজুলেশনে তিনি আবারও ‘‘অবৈতনিক হিসেবে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করবেন’’ মর্মে সিদ্ধান্ত দেখিয়ে নিজের অবস্থান বহাল রাখেন।
২০০৯ সালের নিয়োগ কমিটির সভাপতি চার্চ অব গড উচ্চ বিদ্যালয়ের অবসর প্রাপ্ত শিক্ষক মোঃ আবুল কালাম আজাদ জানান, নিয়োগকৃত শিক্ষকদের নিকট থেকে মোটা অংকের অর্থ লোপাটের ঘটনা তিনি জানতে পেয়ে মনে ভীষণভাবে কষ্ট পেয়েছেন। একারণে ২০০৯ সালের পর থেকে বর্তমান পর্যন্ত তিনি উক্ত বিদ্যালয়ের আর কোন নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করেননি।
একটি নির্ভরযোগ্য সুত্র জানায়, ২০২২ সালের মে মাসে কাগজপত্র জালিয়াতির মাধ্যমে ব্যাকডেটে ২০১২ এবং ২০১৮ সালের নিয়োগ দেখিয়ে পূর্বের নিয়োগকৃত শিক্ষক-কর্মচারী সহ মোট ৩৯ জন শিক্ষক-কর্মচারীর ফাইল এমপিওভুক্তির জন্য সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়া হয়েছে। লালমনিরহাট বাসীর প্রতি সমাজকল্যাণ মন্ত্রীর ইতিবাচক মনোভাবের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ইতোমধ্যে অবৈতনিক প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্বপালনকারী সুভাষ চন্দ্র বর্মন আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বনে গেছেন বলেও শোনা যাচ্ছে। সুভাষ চন্দ্র বর্মন এসব অভিযোগ অস্বীকার করলেও নিয়োগ সংক্রান্ত কাগজপত্রের মূলকপি যাচাই-বাছাই করলে এবং তার বাসভবন, ক্রয়কৃত ভূসম্পত্তি, যানবাহন ও নামে-বেনামে গচ্ছিত ব্যাংক-সঞ্চয়পত্রের অর্থের হিসাব নিলে হয়তো এর সত্যতা বেড়িয়ে আসবে।
এদিকে ২০০৯ সালের নিয়োগ কমিটির সভাপতি মোঃ আবুল কালাম আজাদ সন্দেহ করছেন যে, সম্ভবতঃ তার স্বাক্ষর জাল করেই পরবর্তী নিয়োগ দেখানো হয়েছে। তার স্বাক্ষর জাল করা হোক বা না হোক, তিনি ২০০৯ এর পরে যে উক্ত বিদ্যালয়ের আর কোন নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশ গ্রহণ করেননি তা তিনি উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানিয়ে রাখবেন বলে এ প্রতিনিধিকে জানিয়েছেন।
অন্যদিকে গত ১০ আগস্ট জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন কর্তৃক উক্ত বিদ্যালয়ের বি.এস.এড বেতন স্কেল প্রাপ্ত একমাত্র সহকারী শিক্ষক মোছাঃ আজমেরী হোসেনকে বিদ্যালয় পরিচালনার স্বার্থে ‘ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক’ হিসেবে দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক এর দায়িত্ব পালন সংক্রান্ত পত্রটির কপি হাতে পেয়ে অবৈতনিক প্রধান শিক্ষক হিসেবে ইতিপূর্বে দায়িত্ব পালনকারী সুভাষ চন্দ্র বর্মন সমাজকল্যাণ মন্ত্রীকে দিয়ে আজমেরী হোসেনের বেতন-ভাতা বন্ধ করানোর ঘোষণা দিয়েছেন এবং তিনি বর্তমানে ঢাকায় অবস্থান করছেন। এ ব্যাপারে আজমেরী হোসেনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘‘বিদ্যালয়টিতে আমিই একমাত্র বি.এস.এড ডিগ্রীধারী এবং বি.এস.এড বেতনস্কেল প্রাপ্ত সহকারী শিক্ষক। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের এমপিও তালিকায় আমার নাম ১ নম্বরে। প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে আমার ক্ষেত্রে সবর্দা জ্যেষ্ঠতা/সিনিয়রিটির শর্ত লঙ্ঘন করা হয়েছে, দিনের পর দিন আমি অবমূল্যায়িত হয়েছি। বর্তমানে আমি ‘বি