রিয়াজুল হক সাগর রংপুর জেলা প্রতিনিধিঃ
রংপুরে ছুরিকাঘাতে নিহত স্কুলছাত্রী হত্যায় জড়িত নাহেদুল ইসলাম সায়েম ও তার সহযোগিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ এলাকাবাসী। এসময় বিক্ষুদ্ধরা হত্যা মামলার অন্যতম আসামি সায়েমের প্রতীকী ফাঁসি কার্যকর করেন।
শনিবার (২০ আগস্ট) বেলা সাড়ে ১২টার দিকে পীরগাছা উপজেলার বড়দরগাহ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা এ কর্মসূচির আয়োজন করে। এরআগে সকাল এগারোটা থেকে স্কুল সংলগ্ন বড়দরগাহ বাজারে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল করে নিহতের সহপাঠীরা।
সেখানে প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে অবিলম্বে স্কুলছাত্রী সানজিদা আক্তার ইভার হত্যার সাথে জড়িত প্রধান আসামি সায়েমের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিতে সরকারের প্রতি দাবি জানিয়েছে নিহতের বাবা ইব্রাহিম খান। একই দাবিতে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দরে মধ্যে বক্তব্য রাখেন বক্তব্য বড়দরগাহ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরুল ইসলাম খোকন, স্থানীয় সংগঠক রফিকুল আলম, শিক্ষক আনোয়ার হোসেন প্রমুখ।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, স্কুলছাত্রী ইভা মেধাবী শিক্ষার্থী ছিলেন। এবার আসন্ন এসএসসি পরীক্ষায় তার অংশ নেয়ার কথা ছিল। কিন্তু দুর্বৃত্তরা তাকে বাঁচতে দিলো না। এই ঘটনার নেপন্যে যে কারণই থাকুক না কেন, আমরা চাই সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে হত্যাকাণ্ডে জড়িত আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসি নিশ্চিত করা হোক। যদি দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হয়, আগামীতে দুর্বৃত্তরা এভাবে আরো অনেক মা-বাবার বুক খালি করবে। অসময়ে অনেক মেধাবী প্রাণ হারাবে।
সমাবেশ থেকে নারী ও শিশু নির্যাতন, হত্যা, ধর্ষণ, অপহরণ, যৌন হয়রানিসহ সবধরণের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড বন্ধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকরী বাহিনীসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগকে আরো বেশি তৎপর ও আইন প্রয়োগে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান তারা।
এসময় সড়কের দুপাশে দাঁড়িয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন প্লাকার্ড প্রদর্শন করাসহ ফাঁসির দাবিতে স্লোগানে স্লোগানে প্রতিবাদ মুখর হয়ে উঠেন। এতে প্রায় ঘণ্টাখানেক রংপুর-পাওটানা সড়কের বড়দরগাহ বাজারের কাছে যান চলাচল বিঘ্নিত হয়।
উল্লেখ্য, গত ১৬ আগস্ট মঙ্গলবার ১০টার দিকে কাউনিয়া উপজেলার কুটিরপাড়া বাজার সংলগ্ন মধুপুর সড়কের পাশ থেকে সানজিদা আক্তার ইভার গলাকাটা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। সে কাউনিয়া উপজেলার কুর্শা ইউনিয়নের গোড়াই গ্রামের প্রবাস ফেরত ইব্রাহিম খানের মেয়ে। সানজিদা পার্শ্ববর্তী পীরগাছা উপজেলার বড়দরগাহ উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল।
এ ঘটনায় সানজিদার বাবা ইব্রাহিম খান বাদী হয়ে কাউনিয়া থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। পুলিশ ঘটনার ২৪ ঘণ্টার পার না হতেই সানজিদার দূর সম্পর্কের মামা কথিত প্রেমিক নাহেদুল ইসলাম সায়েম গ্রেপ্তার করেন। সায়েম পীরগাছা উপজেলার কল্যাণী ইউনিয়নের তাশুক উপাশু গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত সেনাসদস্য নুর হোসেনের ছেলে। তিনি রংপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এবার এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন।
গ্রেপ্তার সায়েম এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে নিজের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করে বিজ্ঞ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ইতোমধ্যে আরও একজন আসামিকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে এবং এখনও তদন্ত অব্যাহত রয়েছে। গত ১৮ আগস্ট বৃহস্পতিবার আদালতের নির্দেশে সায়েম ও তার সহযাগিকে রংপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়।