এ. জি জুবরান চৌধুরী, হবিগঞ্জ জেলা প্রতিনিধিঃ চা শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ১৭০ টাকা নির্ধারণ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর এ সিদ্ধান্তে আনন্দিত হয়ে এবং প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে আজ রবিবার (২৮আগস্ট) আনন্দমিছিল করবেন হবিগঞ্জ জেলার ২৪টি বাগানের চা শ্রমিকরা।

গতকাল শনিবার (২৭আগস্ট) মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা চা শিল্প মালিকদের সঙ্গে বৈঠক করেন। এসময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে চা শিল্প মালিকদের বৈঠকে দৈনিক ১৭০ টাকা মজুরি নির্ধারণ করা হয়। আনুপাতিক হারে অন্যান্য ভাতাও বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।

বৈঠক শেষে গণভবনের গেটে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস দৈনিক মজুরি ১৭০ টাকা নির্ধারণের ঘোষণা দেয়ার পর চা শ্রমিকরা প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণাকে সম্মান জানিয়ে আন্দোলন প্রত্যাহার করে কাজে যোগ দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী চা শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ১৭০ টাকা নির্ধারণ করায় প্রধানমন্ত্রীর নিকট কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন চা শ্রমিক নেতৃবৃন্দ এবং সকল সাধারণ চা শ্রমিকেরা। তাঁরা প্রধানমন্ত্রী এ স্বীদ্ধান্ত গ্রহণ করায় অনেক খুশি এবং আনন্দিত। হবিগঞ্জের ২৪ টি চা বাগানের ২৫ হাজার চা শ্রমিকরাও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এ মহৎ এবং মানবিক সিদ্ধান্ত গ্রহনে আনন্দে ভাসছেন। তাঁরা মমতাময়ী প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে আনন্দ মিছিলও করবেন, বলে জানিয়েছেন।

চুনারুঘাট উপজেলার চান্দপুর চা বাগান পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি সাধন সাঁওতাল তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমরা সবসময় বলে আসছি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যা বলবেন; আমরা তাই মেনে নেব। আমরা খুব আনন্দিত হয়েছি। রবিবার প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে আনন্দ মিছিল করব।’

বেগমখান চা বাগানের শ্রমিক নেতা ও সাবেক ইউপি মেম্বার লক্ষীচরণ বাকতি বলেন, ‘১৭০ টাকাতেই আমরা খুশি। প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি দেখেছেন বলে ১৭০ টাকা পর্যন্ত মজুরি ওঠেছে। যদি মালিকপক্ষ বিষয়টি নির্ধারণ করত; তাহলে কোনভাবেই ১৫০ টাকার ওপরে মজুরি নির্ধারণ হতো না।’

তেলিয়াপাড়া চা বাগান পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি খোকন তাঁতী বলেন, ‘আমরা এতদিন আমাদের মা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর মুখের দিকে তাকিয়ে ছিলাম। আজ ১৭০ টাকা মজুরি নির্ধারিত হওয়ায় আমরা চা বাগানীরা খুবই আনন্দিত। এ সিন্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে আমরা আনন্দ মিছিল করব।’

লস্করপুর ভ্যালি কমিটির সভাপতি রবীন্দ্র গৌড় বলেন, ‘আজ (গতকাল শনিবার) সকালে আমু চা বাগানে লস্করপুর ভ্যালির সকল চা বাগান নেতৃবৃন্দকে নিয়ে সভায় আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, প্রধানমন্ত্রী যে সিদ্ধান্ত দেবেন; আমরা তাই মেনে নেব। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী চা শ্রমিকের দৈনিক মজুরি ১৭০ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছেন, আমরা তা মেনে নিয়েছি। রবিবার সাপ্তাহিক ছুটি থাকায় সোমবার আমরা কাজে ফিরে যাব।’

বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নৃপেন পাল বলেন, ‘দীর্ঘ ১৯ দিন আন্দোলন-সংগ্রামের পর মানবতার মা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আজ (গতকাল শনিবার) মালিকদের সাথে বসে ১৭০ টাকা মজুরি নির্ধারণ করায় আমরা আনন্দিত ও কৃতজ্ঞ।

এ সিদ্ধান্তে সাধারণ শ্রমিকরাও অনেক আনন্দিত হয়েছেন। এজন্য চা শ্রমিক ইউনিয়নের পক্ষ থেকে সকলকে ধন্যবাদ জানাই।’

রবিবার (২৮ আগস্ট) চান্দপুর চা বাগানে আনন্দ মিছিল বের করবেন বলেও জানিয়েছেন চা শ্রমিক ইউনিয়নের এ কেন্দ্রীয় নেতা। তিনি আরও জানান, ‘সকল চা বাগানে আনন্দ মিছিল করার পরিকল্পনা রয়েছে চা শ্রমিক ইউনিয়নের।’

উল্লেখ্য, ১২০ টাকা থেকে দৈনিক ৩০০ টাকা মজুরির দাবিতে গত ৯ আগস্ট থেকে চারদিন ২ ঘন্টা করে কর্মবিরতি শুরু করেন চা শ্রমিকরা। পরে ১৩ আগস্ট থেকে ২৭ আগস্ট পর্যন্ত অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘট শুরু করে পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন করেন শ্রমিকেরা।

অবশেষে গতকাল শনিবার (২৭ আগস্ট) মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ১৭০ টাকা মজুরি নির্ধারণের ঘোষণা দেয়ায় আন্দোলন প্রত্যাহার করে কাজে যোগদান করতে যাচ্ছেন চা শ্রমিকেরা।

এ. জি জুবরান চৌধুরী
হবিগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি, দৈনিক চিত্রাবাণী-২৪
যোগাযোগঃ ০১৭৫৬৭৫৮০০৪