(প্রতীকী ছবি)
এ. জি জুবরান চৌধুরীঃ
সুস্থতা মহান আল্লাহর এক বড় নেয়ামত। আবার অসুস্থতাও আল্লাহ তায়ালার এক নেয়ামত। অসুস্থতা হলো আল্লাহর দয়া। রোগ-বালাই আল্লাহর পক্ষ থেকে বান্দার ওপর পাঠানো রহমত। মহান আল্লাহ তায়ালা মানুষকে যেমন সুস্থ রাখেন তেমনি রোগ-ব্যধিও দেন। আল্লাহ বান্দার কল্যানে তাঁকে অসুস্থ করেন। অনেক সময় মহান আল্লাহ মুমিন ব্যক্তিকে রোগ দিয়ে তাঁর ঈমানের পরিক্ষা নেন। রোগ-বালাই দিয়ে আল্লাহ মানুষকে পরিক্ষা করেন যাতে মানুষ আল্লাহকে স্মরণ করে। যাতে তাঁরা আল্লাহকে ভুলে না যায়। রোগ-বালাই, বালা-মুসিবত, বিপদ-আপদে মহান আল্লাহকে আমরা কতটুকু স্মরণ করছি তাও আল্লাহ দেখেন।
মহান আল্লাহ যাকে পছন্দ করেন তাকে কষ্ট দেন, রোগ দেন। ইসলামের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, নবী, সাহাবি, বুজুর্গ, আল্লাহর অলি এবং আল্লাহর পছন্দনীয় অনেক ব্যাক্তি রোগ-ব্যধিতে আক্রান্ত হয়েছিলেন। এর মধ্যে আল্লাহর নবী হযরত আয়ুব (আ.) এর কথা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এমনকি সৃষ্টি জগতে মহান আল্লাহর সবচেয়ে পছন্দনীয় ব্যক্তি আল্লাহর প্রিয় বন্ধু সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) -কেও আল্লাহ রোগ দিয়েছেন, অসুস্থ করেছেন, অনেক কষ্টে ফেলেছেন।
রোগ-ব্যধির কারনে অনেক কষ্ট আর যন্ত্রণা সহ্য করতে হলেও মহান আল্লাহ মানুষকে অসুস্থতার দরুন বিপুল সওয়াবের সুসংবাদও দিয়েছেন। বিভিন্ন হাদিসে উল্লেখ রয়েছে অসুস্থতায় মানুষের গুনাহ মাফ হয়, অন্তর পরিষ্কার হয় ও পাপ ক্ষয় হয়। রোগাক্রান্তও হওয়ার পরও মহান আল্লাহর প্রতি যার ভরসা আর বিশ্বাসের একটুও কমবে না বরং সে নিরাশ না হয়ে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে একমাত্র আল্লাহর প্রতি ভরসবান থাকবে এবং তাঁর কাছে রোগমুক্তির জন্য প্রার্থনা করবে সেই প্রকৃত মুমিন। আমরা যখন রোগাক্রান্ত হই তখন আমরা চিকিৎসার জন্য ডাক্তারের শরণাপন্ন হই। কিন্তু যিনি রোগ দিয়েছেন তিনিই তো একমাত্র এই রোগ থেকে মুক্তি দান করতে পারেন। আমরা কি একাবারের জন্যও তাঁর সাহায্য চেয়েছি?
হ্যাঁ, ইসলাম অসুস্থ হলে চিকিৎসার তাগিদ দিয়েছে। অসুস্থ হলে চিকিৎসা করানো সুন্নত। তবে মহান আল্লাহ যদি রোগ ভালো না করেন তাহলে কোনো ডাক্তারই রোগ হতে আমাদের মুক্তি দিতে পারবে না। ডাক্তার তখনই আমাদের সাহায্য করতে পারবে যখন আমরা আল্লাহর কাছে সাহায্য চাই এবং আল্লাহ আমাদের সাহায্য করেন। সুস্থ করার মালিক হলেন একমাত্র মহান আল্লাহ। যিনি রোগ দিয়েছেন তিনিই একমাত্র আমাদের রোগ থেকে পরিত্রাণ দিতে পারেব। তিনিই অসুখ সারানোর উছিলায় ডাক্তার, চিকিৎসা, ঔষধ দিয়েছেন। তাঁর ইচ্ছা না হলে এগুলো কিছুই কাজে আসবে না। যদি অসুস্থ হওয়ার পর আমরা আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করি তবেই ডাক্তার, চিকিৎসা আর ঔষধের উছিলায় আল্লাহ আমাদের সুস্থতা দান করেন।
মহাগ্রন্থ পবিত্র কোরআনে এমন কিছু আয়াত আছে যেগুলো বিভিন্ন রোগ-ব্যাধির জন্য শিফা স্বরূপ। তাই এ সব আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলার কাছে রোগ থেকে মুক্তি চাওয়া উচিৎ। রোগ থেকে মুক্তি লাভে পূর্ব শর্ত হচ্ছে আল্লাহর বিধানকে জানা এবং যথাযথ মানার পাশাপাশি পূর্ণ আস্থা এবং বিশ্বাস রাখা। রোগ-ব্যাধি থেকে শিফা লাভে কয়েকটি আয়াত তুলে ধরা হলো-
ক. বিসমিল্লাহ সহ সুরা ফাতিহা তিলাওয়াত
بِسْمِ اللّهِ الرَّحْمـَنِ الرَّحِيمِ
الْحَمْدُ للّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ – الرَّحْمـنِ الرَّحِيمِ – مَـالِكِ يَوْمِ الدِّينِ – إِيَّاكَ نَعْبُدُ وإِيَّاكَ نَسْتَعِينُ – اهدِنَــــا الصِّرَاطَ المُستَقِيمَ – صِرَاطَ الَّذِينَ أَنعَمتَ عَلَيهِمْ غَيرِ المَغضُوبِ عَلَيهِمْ وَلاَ الضَّالِّينَ – اَمِيْن –
খ. সূরা তাওবার ১৪নং আয়াত
وَيَشْفِ صُدُورَ قَوْمٍ مُؤْمِنِينَ
উচ্চারণ- ওয়া ইয়াশফি ছুদু-রা ক্বাওমিম মু’মিনি-ন।
অর্থ : এবং মু’মিনদের (মুসলমানদের) অন্তরসমূহ শান্ত করে দেন।
গ. সুরা ইউনুসের ৫৭নং আয়াত
وَشِفَاءٌ لِمَا فِي الصُّدُورِ وَهُدًى وَرَحْمَةٌ لِلْمُؤْمِنِينَ
উচ্চারণ : ওয়া শিফাউ’ল লিমা- ফিচ্ছুদু-রি ওয়া হুদাও ওয়া রাহমাতুল লিল মু’মিনি-ন।
অর্থ : এবং অন্তরের রোগের নিরাময়, হেদায়েত ও রহমত মুসলমানদের জন্য।
ঘ. সুরা নহলের ৬৯ নং আয়াত
يَخْرُجُ مِنْ بُطُونِهَا شَرَابٌ مُخْتَلِفٌ أَلْوَانُهُ فِيهِ شِفَاءٌ لِلنَّاسِ
উচ্চারণ : ইয়াখরুঝু মিমবুতু-নিহা- শারা-বুম মুখতালিফুন, আলওয়ানুহু- ফি-হি শিফা-উ লিন্না-সি।
অর্থ : তার পেট থেকে বিভিন্ন রঙে পানীয় নির্গত হয়। তাতে মানুষের জন্যে রয়েছে রোগের প্রতিকার।
ঙ. সুরা শুআরার ৮০ নং আয়াত
وَإِذَا مَرِضْتُ فَهُوَ يَشْفِينِ
উচ্চারণ : ওয়া ইজা মারিদতু ফা হুয়া ইয়াশফি-নি।
অর্থ : যখন আমি রোগাক্রান্ত হই, তখন তিনিই আরোগ্য দান করেন।
চ. সুরা বনি ইসরাঈলের ৮২নং আয়াত
وَنُنَزِّلُ مِنَ الْقُرْآنِ مَا هُوَ شِفَاءٌ وَرَحْمَةٌ لِلْمُؤْمِنِينَ
উচ্চারণ : ওয়া নুনাজ্জিলু মিনাল ক্বুরআ’নি মা হুয়া শিফাউও ওয়া রাহমাতিুল লিলমু’মিনি-ন।
অর্থ : আমি কোরআনে এমন বিষয় নাযিল করি যা রোগের সুচিকিৎসা এবং মুমিনের জন্য রহমত।
উপরোল্লিখিত আয়াতগুলো একবার তিলাওয়াত করে একটি পানিভর্তি পাত্রে দম করে পানিটি পান করলে আল্লাহ তাআলা জটিল ও কঠিন রোগ থেকে তার বান্দাদের হিফাজত করবেন।
আবার হাদিস শরিফে এসেছে, অসুস্থ হলে পড়ার জন্য আল্লাহর রাসুল (সা.) একটি দোয়া শিখিয়েছেন। কেউ দোয়াটি পড়লে আল্লাহ তাআলা অসুস্থ ব্যক্তিকে দ্রুত সুস্থতা দান করেন।
আনাস বিন মালিক (রা.) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) এই দোয়া পড়ে অসুস্থ ব্যক্তিদের ঝাড়ফুঁক করতেন। দোয়াটি হলো-
اللَّهُمَّ رَبَّ النَّاسِ أَذْهِبْ الْبَاسَ اشْفِهِ وَأَنْتَ الشَّافِي لَا شِفَاءَ إِلَّا شِفَاؤُكَ شِفَاءً لَا يُغَادِرُ سَقَمًا
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা রাব্বান নাসি উজহিবাল বা’সি, ইশফিহি ওয়া আনতাশ-শাফি, লা শিফায়া ইল্লা শিফায়ুকা শিফায়ান লা ইউগাদিরু সাকমা।
অর্থ : হে আল্লাহ! মানুষের প্রতিপালক, কষ্ট দূরকারী। আমাকে আরোগ্য দিন, আপনি আরোগ্যকারী—আপনি ছাড়া কোনো আরোগ্যকারী নেই। এমন আরোগ্য দিন যেন কোনো রোগ না থাকে। (বুখারি, হাদিস : ৫৭৪২)