এ. জি জুবরান চৌধুরী, হবিগঞ্জ জেলা প্রতিনিধিঃ হবিগঞ্জের লাখাই উপজেলার ৩নং মুড়িয়াউক ইউনিয়নের সাতাউক গ্রামে নদী-নালা, খাল-বিল, হাওর সহ সব জলাশয়গুলোতে অলিপুর এবং মাধবপুর উপজেলার বিভিন্ন কারখানার বিষাক্ত বর্জ্য অপসারিত হয়ে জলাশয় গুলোর মাছ মরে ভেসে উঠছে।
উক্ত গ্রামের কানাই নদী, খাল-বিল ও হাওরে অর্থাৎ পানির সংযোগ যেখানেই আছে সেখানেই কারখানাগুলোর বিষাক্ত বর্জ্য বর্ষার পানিতে অপসারিত হয়ে পানি দূষিত হচ্ছে এবং এসকল নদী-খাল, হাওর এবং অন্যান্য জলাশয়ের ছোট-বড় সবধরনের মাছ গুলো মরে ভেসে উঠছে। নানা ধরনের সমস্যায়ও পড়েছেন এ গ্রামের জনগণ।
জানা গেছে, পছা-মরা মাছের দুর্গন্ধের কারণে কানাই নদীর তীরে বা হাওরে যাওয়া খুবই দায় হয়ে পড়েছে। এবং হাওরে না যেতে পারায় কৃষি কাজও ব্যাহত হচ্ছে বলে মন্তব্য করছেন অনেকে।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, কারখানা গুলোর বিষাক্ত বর্জ্য গ্রামের কানাই নদী সহ জলাশয় গুলোতে অপসারণ হওয়ার কারনে পানি দূষিত হচ্ছে। এবং মরা-পছা মাছের দুর্গন্ধে পানিতে নামতেও পারেন না কেউ। এমনকি দুর্গন্ধের কারনে নদী, খাল-বিলের পাশ দিয়েও যাওয়া যায় না। দূষিত পানিতে নামলেই শরীর চুলকায় ও নানা ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। এজন্য নদীর পানিতে এখন আর গোসল করাও যাচ্ছে না। কানাই নদী বা কাল-বিল ও হাওরে জেলেরা মাছ ধরে থাকেন সেই জন্মলগ্ন থেকেই। কিন্তু মাধবপুর উপজেলার ও অলিপুরে কারখানা গুলোর বিষাক্ত বর্জ্য অপসারণের কারনে ও ক্ষতিকারক মারাত্মক পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ায় জেলেরা বা সাধারণ মানুষ মাছ ধরতেও পারছেন না।
এই গ্রামের প্রবীণ মুরুব্বিরা বলেন, তাদের জীবেনে এই অবস্থা তারা কখনো দেখেননি। এবারই প্রথম যে এমন মারাত্বক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। এখন যে চিত্র দেখা দিয়েছে দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে এরচেয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতিও সৃষ্টি হতে পারে। মাছের সংকটেও পড়তে পারে এলাকাটি।
এমন পরিস্থিতি সৃষ্টির ফলে মারাত্মক ক্ষতি সাধিত হচ্ছে। ভোগান্তিতে পড়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। এই ভাবে চলতে থাকলে এ গ্রামে মৎস্য হুমকির মুখে পড়বে বলেও ধারণা করা হচ্ছে। পানি দূষণ আর দুর্গন্ধের কারনে পরিবেশও দূষিত হচ্ছে। আর এমন অবস্থায় অসুস্থ হয়েও পড়তে পারেন গ্রামের লোকেরা। নদীর পানিতে গোসল করা, গ্রামের কৃষকরা হাওরে যাওয়া এবং জেলেরা মাছ ধরা থেকে শুরু করে প্রত্যেকটা ক্ষেত্রেই এর ক্ষতিকারক প্রভাব পড়ছে। বিষাক্ত বর্জ্য অপসারণের ফলে যেমন একদিকে মাছ গুলো মরে যাচ্ছে তেমনি মানুষেরও নানা ধরনের সমস্যা হচ্ছে। কারখানা গুলোর বিষাক্ত বর্জ্য ওই গ্রামের নদী, খাল-বিল, হাওর ও জলাশয় গুলোতে অপসারণ রোধে দ্রুত সংলিষ্ঠ কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নিলে একপর্যায়ে মরে বিলুপ্তের দিকে চলে যেতে পারে এ এলাকার মাছগুলো।
বিভিন্ন ধরনের ক্ষতি ও মারাত্মক সমস্যা দেখা দিতে পারে স্থানীয় জনগনের জীবনমানে। অতএব, অনতিবিলম্ব সংলিষ্ঠ কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করে নদী ও জলাশয় গুলোতে কারখানা গুলোর বিষাক্ত ক্ষতিকারক বর্জ্য অপসারণ বন্ধ করলে বড় ধরনে বিপদ ও ক্ষতি থেকে পরিত্রাণ পেতে পারে এই গ্রামটি এবং গ্রামবাসীরা।
লাখাই উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. ইদ্রিস তালুকদার বলেন, “৩নং মড়িয়াউক ইউনিয়নের সাতাউক গ্রামে নদী ও জলাশয়ে কারখানার বর্জ্য গুলো অপসরণের ফলে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে তা দুঃখজনক। এখানে আমাদের কোনো কিছু করার মতো নেই। এ বিষয়টা প্রশাসন দেখবে। আমাদের এখানে কোনো পদক্ষেপ নেওয়ারও কথা নয়৷ এ বিষয়ে সবাই অবগত আছেন, অনেক বিক্ষোভ, লেখা-লেখিও করা হয়েছে। কারখানা গুলোকেও বর্জ্য অপসারণে নিষেধ করা হয়েছে। তারপরের তার নিষেধ না মেনে বিষাক্ত বর্জ বর্ষার পানিতে ছেড়েই যাচ্ছে। এ বিষয়টা জেলা প্রশাসকের আওতাদিনে তিনি এই বর্জ্য অপসারণ রোধে ব্যাবস্থা নিবেন। আর সেখান থেকে বা প্রশাসনের পক্ষ থেকে যদি কোনো পদক্ষেপ না নেওয়া হয় তাহলে তো এখানে আমাদের কিছু করার নেই।”
ভেটেরিনারি সার্জন ও লাখাই উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসার ডাঃ মো. শাহাদ হোসেন বলেন, “৩নং মুড়িয়াউক ইউনিয়নের সাতাউক গ্রামের এ অবস্থা সৃষ্টির কথা আমরা জানতে পেরেছি। তো এখানে আমাদের কোনো কিছু করার নেই। এটা মৎস্য অধিদপ্তরের দেখার বিষয়। আমরা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের এখানে কোনো পদক্ষেপ বা ব্যবস্থা গ্রহন করার মতো কিছু নেই। বিষাক্ত বর্জ্য অপসারণ বন্ধ না করলে এ এলাকায় মাছের সংকট এবং মানুষের জীবনমানের ব্যাপক ক্ষতি দেখা দিতে পারে। এই সমস্যা টা তো আসলে নতুন না, অনেক আগ থেকেই এরকম সমস্যা দেখা দিয়েছে। আর এ নিয়ে সাংবাদিক ভাইয়েরাও অনেক লিখালিখি করেছেন, আন্দোলন, মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল, মিটিং করেছেন। এ সম্পর্কে সকলেই জানেন। আমাদের ডিসি মেডামও জানেন। ডিসি মেডাম-ই এ সমস্যা দূরীকরণে পদক্ষেপ গ্রহণ করার কথা।”
এ বিষয়ে হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসক জনাব ইসরাত জাহানের সাথে কথা বললে…… তিনি বলেন, এ বিষয়ে তো আমি কোনো কিছু জানিনা। আগে কখনো এ সম্পর্কে আমি কিছু শুনি নি। এই প্রথম আমি আপনাদের কাছ থেকে জানতে পারলাম। আগে আমি কখনো এ সম্পর্কে জানতাম না।
আপনারা আমাকে এই বিষাক্ত বর্জ্য অপসারণের ফলে কোথায় এরকম ঘটনা ঘটেছে তা আমাকে মেসেজ করে পাঠিয়ে দিন। আমি এ বিষাক্ত বর্জ্য অপসারণ ও সৃষ্ট সমস্যা রোধে ব্যাবস্থা নিবো এবং ওই জায়গায় আমার লোক পাঠাবো।”
দৈনিক চিত্রাবাণী-২৪ এর পক্ষে, জেলা প্রশাসক জনাব ইসরাত জাহান‘কে তাঁর (WhatsApp) -এ লাখাই উপজেলার ৩নং মুড়িয়াউক ইউনিয়নের সাতাউক গ্রামের নদী, খাল-বিল, হাওর ও জলাশয় গুলোতে কারখানার বিষাক্ত বর্জ্য অপসারণ ও এর ফলে সৃষ্ট সমস্যার কথা এবং ওই গ্রামের নদী ও অন্যান্য জলাশয়ের বর্তমান চিত্রের ছবি ও ভিডিও ফুটেজ প্রেরণ করা হয়।
এ. জি জুবরান চৌধুরী
হবিগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি, দৈনিক চিত্রাবাণী-২৪
যোগাযোগঃ ০১৭৫৬৭৫৮০০৪