ভিসির অদক্ষতা: স্বেচ্ছাচারিতা আর অনিয়মে থেমে গেছে শিক্ষার মান ও উন্নয়নমূলক কাজ
*একাই দখলে রেখেছেন ৬টি পদ *শিরোনাম হচ্ছেন গণমাধ্যমে কথার মধ্যে আটকে গেছেন : সংকট বাড়ছেই
স্টাফ রিপোর্টার : বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ড.ছাদেকুল আরেফিন। ২০১৯ সালের ৩ নভেম্বর ভিসি হিসেবে নিয়োগ পেয়ে যোগদান করেছিলেন ৬ নভেম্বর। যোগদানের সময় কারো থেকে ফুলও গ্রহন করেন নি। বলেছিলেন সব সংকট কাটিয়ে এগিয়ে যাবো।
গত আড়াই বছরে কোন সংকট কাটাতে পারেননি তিনি। সংকট বাড়ছেই। অদক্ষতা সময়ের কাজ সময়ে না করা। টেবিলে ফাইল আসলে ১৫ দিনেও সেই ফাইলে স্বাক্ষর না করা। শূন্য পদ পুরণে অনাগ্রহী। সেশনজট কমানোর উদ্যোগ না নেয়া। নুতন করে একটি ডিপিপিও জমা না দেয়ার ব্যর্থতা। পুরনো প্রকল্পের কাজে তদারকি না করা। অকারনে শিক্ষকের চাকরি অস্থায়ী অবস্থায় দীর্ঘদিন ঝুলিয়ে রাখা। সহকারী অধ্যাপক পদের পদোন্নতি না দেয়া। শিক্ষার মান নিম্মমূখী করাসহ পদে পদে স্বেচ্ছাচারী ভিসি ড.ছাদেকুল আরেফিন রাখছেন অদক্ষতার ছাপ। খামখেয়ালীপনা আর অনিয়মতান্ত্রিকভাবে পরিচালনার কারনে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কোর রেংকিং করা ৪৬টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্য ৪৫তম।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানিয়েছে, ভিসি ড.ছাদেকুল আরেফিনের অদক্ষতা ও স্বেচ্ছাচারিতায় থেমে গেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক মান ও অবকাঠামোগত বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ৷ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, পরিচালক (অর্থ ও হিসাব), প্রধান প্রকৌশলী, পরিকল্পনা ও উন্নয়ন পরিচালক এসব শূণ্যপদে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন কর্তৃক নিয়োগ দেয়ার চিঠি থাকা সত্বেও ভিসি কাউকে নিয়োগ দিচ্ছে না ৷ অনেক শিক্ষকের চাকরি অস্থায়ী অবস্থায় দীর্ঘদিন পর্যন্ত বিনা কারণে ঝুলিয়ে রেখেছেন ৷ এছাড়া অনেক শিক্ষকের সহকারী অধ্যাপক পদের পদোন্নতি বহুদিন যাবৎ ঝুলিয়ে রাখা হচ্ছে। ফলে একডেমিক কার্যক্রমের উপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে বলে জানান শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।
এদিকে ভিসি ড. ছাদেকুল আরেফিন নিজে ৬টি পদ দখলে রেখেছেন । যে সব পদ হলো প্রো-ভিসি, ডিন-বিজ্ঞান ও প্রকৌশল অনুষদ, ডিন-জীববিজ্ঞান অনুষদ, ডিন- বিজনেস স্টাডিজ অনুষদ, ডিন-সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ ও ডিন- আইন অনুষদ৷
অভিযোগ রয়েছে গত আড়াই বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য তিনি কোনো কাজই করেননি। কথার ফুলঝুরি আর ছোট মাঝারী মানের বেসরকারী প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের অতিথি হিসেবে আসন গ্রহন ছাড়া তার কোন কাজ নেই। দ্বায়িত্ব নেয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত একটি ডিপিপিও জমা দিতে পারেননি৷
এছাড়াও অভিযোগ আছে ভিসির দপ্তরে ফাইলের পর ফাইল জমা থাকা সত্বেও ১৫ থেকে ২০ দিন লাগিয়ে দেন ফাইলগুলো স্বাক্ষর করতে৷ ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্ত কাজে নেমে এসেছে স্থবিরতা।
সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন কর্তৃক ৪৬টি বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রেডিং এ বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান ৪৫ তমে দাড়িয়েছে যা দক্ষিণাঞ্চলের এক মাত্র সর্বোচ্চ এই বিদ্যাপীঠের জন্য একটি কলঙ্কজনক অধ্যায়। অথচ পুর্বে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কোর ছিল ৮ম।
শিক্ষক, কর্মকর্তাদের সাথে রেগে গিয়ে ভিসি প্রায়ই অসাধাচরণ করে থাকেন। দম্ভ করে বলেন উপরে আল্লাহ আর নিচে ভিসি এর মধ্যে আর কেউ নাই৷ সবকিছুই করার ক্ষমতা আমার আছে৷
ভিসির অদক্ষতা -স্বেচ্ছাচারিতা আর খামখেয়ালীপনার কারণে গত দুই অর্থবছরের বাজেট থেকে সিংহভাগ টাকা বিশ্ববিদ্যালয় খরচ করতে পারেনি বিধায় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন টাকা কেটে নিয়ে গেছে। যার ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নমূলক কোন কাজই হচ্ছে না।
সমস্যায় জর্জরিত বিশ্ববিদ্যালয় :
প্রতিষ্ঠার এক যুগে প্রবেশ করলেও নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনো শেষ হয়নি প্রথম প্রকল্পের কাজ। ফলে ক্লাসরুম সংকট, আবাসিক সংকট, শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অফিস সংকটও চরম। সেমিনার, সিম্পোজিয়ামের জন্য মানসম্মত পৃথক অডিটোরিয়াম নেই, নেই পর্যাপ্ত গবেষণাগার। লাইব্রেবিতে প্রয়োজনীয় বইয়ের সংকটসহ পরিবহন সুবিধা এখনো পুরোপুরি নিশ্চিত করা যায়নি। মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামোর পাশাপাশি সর্বাগ্রে প্রয়োজন দক্ষ, যোগ্য, নিবেদিতপ্রাণ, আদর্শবান শিক্ষক। ‘বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র-শিক্ষকের অনুপাতে শিক্ষক স্বল্পতা রয়েছে। প্রফেসর মাত্র একজন,অ্যাসোসিয়েট প্রফেসরের সকল পদ শূণ্য। নেই উপ-উপাচার্য, রেজিস্ট্রার, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, সহ ৫টি অনুষদের ডিন। অপরদিকে ২৪টি বিভাগে ও পর্যাপ্ত শিক্ষক নেই। একজন শিক্ষককে প্রয়োজনের তুলনায় বেশি কোর্স পরিচালনা করতে হচ্ছে। ফলে শিক্ষার্থীরা গুণগত শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, তাদের ওপর জেঁকে বসেছে সেশনজট কালো থাবা। কবে কাটবে এই সেশন জট তা বলতে পারছেন না কেউ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকটি বিভাগের ছাত্র-ছাত্রীরা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে সংকটের শেষ নেই । লাইব্রেরীতে গেলে পাঠ্য বইও পাওয়া যায় না। ক্লাস রুম না থাকায় দাড়িয়ে থাকতে হয় শিক্ষার্থীদের। বিজ্ঞানাগার নেই মান সম্মত। আবাসন ব্যবস্থা অতি সীমিত। ছোট্ট একটি খাটে ২ জনকে থাকতে হয়। পরিবহন সংকট তীব্র। এর উপর শেষন জট দেখা দিয়েছে বিভিন্ন বিভাগে। বৃস্টি এলেই ক্যাম্পাস পানিতে ডুবে যায়। অথচ ড্রেনেজ ব্যবস্থা নেই সেখানে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক সহকারী অধ্যাপক বলেন, এখানে শিক্ষক সংকট তীব্র। অনেক বিভাগে ১, ২ এবং ৩/৪ জন করে শিক্ষক রয়েছে। ক্লাস রুমের অভাব প্রকট। ল্যাব ফেসিলিটিজ পর্যাপ্ত নেই। শিক্ষক, শিক্ষার্থীদের পরিবহন সংকট। আবসিক সমস্যা দুর করা দরকার। প্রশাসনের দুর্বলতার কারনে প্রথম ধাপের উন্নয়ন কাজ এখনও শেষ হয়নি। এর দায় এড়ানোর সুযোগ নেই। তিনি বলেন, শেষন জট থাকলেও শিক্ষকরা চেস্টা করছেন তা কাটিয়ে উঠতে।
এদিকে পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘জুনিয়র’ পদে যোগদানের জন্য আবেদন করতে চাইলেও সেটি পারেন না বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।